Header Ads

Header ADS

নেত্রকোণা জেলা

নেত্রকোণা জেলা মূলত ধান উদ্বৃত্ত জেলা হলেও এখানে রয়েছে দেশের একমাত্র চীনা মাটির খনি ও হাওরাঞ্চলের অফূরন্ত মৎস্য ভান্ডার। মহুয়া মলুয়া স্মৃতি বিজরিত ময়মনসিংহ গীতিকা ও লোক সংস্কৃতির চারণ ভূমি এই নেত্রকোনা। ইতিহাস ঐহিত্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ জেলা নেত্রকোণা। সুদুর প্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা, সমন্বিত উদ্যোগ, জাতীয় পর্যায়ের দূরদর্শী ও যোগ্য নেতৃত্বে অভাব, মন্ত্রীত্ব না থাকা আর নানাবিদ সমস্যার কারণে এ জেলা দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে উন্নয়নের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তারপরও এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে উন্নয়নের নব-দিগন্ত উন্মোচনের রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। ১৯৪৫ সালের ৮ এপ্রিল নেত্রকোনার নাগড়া মাঠে নিখিল ভারত কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ জেলার মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় হলেও রাজনৈতিক সচেতনতার কারণে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, টংক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, ফকির বিদ্রোহ আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে নেত্রকোণাবাসীর ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল।


খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে এ অঞ্চল গুপ্ত সম্রাটগণের অধীন ছিল। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গুপ্তযুগে সমুদ্রগুপ্তের অধীনস্থ এ অঞ্চলসহ পশ্চিম ময়মনসিংহ কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুরাজ শশাংকের আমন্ত্রণে চৈনিক পরিব্রাজক হিউ এন সাঙ যখন কামরূপ অঞ্চলে আসেন, তখন পর্যন্ত নারায়ণ বংশীয় ব্রাহ্মণ কুমার ভাস্কর বর্মণ কর্তৃক কামরূপ রাজ্য পরিচালিত ছিল। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে পূর্ব ময়মনসিংহের উত্তরাংশে পাহার মুল্লুকে বৈশ্যগারো ও দুর্গাগারো তাদের মনগড়া রাজত্ব পরিচালনা করতো। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ দিকে জনৈক মুসলিম শাসক পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চল আক্রমণ করে অল্প কিছুদিনের জন্য মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে জিতারা নামক একজন সন্ন্যাসী কামরূপের তৎকালীন রাজধানী ভাটী অঞ্চল আক্রমণ ও দখল করেন। সে সময় পর্যন্তও মুসলিম শাসক ও অধিবাসী স্থায়ীভাবে অত্রাঞ্চলে অবস্থান ও শাসন করতে পারেনি। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে (১৪৯৩-১৫১৯) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মুসলিম রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত হয়।
আলাউদ্দিন হোসেন শাহ’র পুত্র নসরৎ শাহ’র শাসনামলে (১৫১৯-১৫৩২) দু'একবার বিদ্রোহ সংঘটিত হলেও বিদ্রোহীরা সফল হয়নি। সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চলেই নসরৎ শাহ’র শাসন বলবৎ ছিল। নসরৎ শাহ-র উত্তরাধিকারীরা (১৫৩৩-১৮৩৮) কিংবা তার পরবর্তী লক্ষ্মণাবতীর অন্য শাসকেরা ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে পারেনি। ময়মনসিংহের উত্তরাংশ কোচদের পুনরাধীন হয়ে পড়ে। বাকী অংশ দিল্লীর পাঠান সুলতান শেরশাহ-র (১৫৩৯-১৫৪৫) শাসনভুক্ত হয়েছিল। তৎপুত্র সেলিম শাহ’র শাসনের সময়টি (১৫৪৫-১৫৫৩) ছিল বিদ্রোহ ও অস্থিরতায় পূর্ণ। রাজধানী দিল্লী থেকে অনেক দূরে ও কেন্দ্রীয় রাজশক্তির দূর্বলতার সুযোগে প্রধান রাজস্ব সচিব দেওয়ান সুলায়মান খাঁ (যিনি পূর্বে কালিদাস গজদানী নামে পরিচিত ছিলেন) সম্রাটের বিরুদ্ধাচরণ করেন। এতে করে দেশী ও বিদেশী রাজ্যলিপ্সুরা এতদঞ্চল দখলের প্রয়াস পায়। এর মধ্যে ভাটী অঞ্চল (পূর্ব-উত্তরাংশ) সোলায়মান খাঁ-র দখলভুক্ত ছিল। কেন্দ্রীয় শাসকের প্রেরিত সৈন্যদের হাতে সোলায়মান খাঁ নিহত হলেও তার দু’পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ঈশা খাঁ খিজিরপুর থেকে ভাটী অঞ্চলে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ঈশা খাঁ’র মৃত্যুর পর তৎপুত্র মুসা খাঁ ও আফগান সেনা খাজা উসমান খাঁ কর্তৃক অত্রাঞ্চল শাসিত ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৫-১৬২৭) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মোঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ খিস্টাব্দে হওয়া নেত্রকোনা মহকুমাকে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি নেত্রকোনা জেলা করা হয়।


 নেত্রকোণা সদরের মদনপুরে উপ-মহাদেশের প্রথম ধর্ম প্রচারক, সূফী সাধক হয়রত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী (রঃ) কেন্দুয়া উপজেলার মোগল আমলের রোয়াইল বাড়ী দূর্গ, দূর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর চিনামাটির খনি, বিরিশিরি কালচারাল একাডেমী, টংক আন্দোলনের স্মৃতি সৌধ, রামমনি স্মৃতি সৌধ, রানীখং মিশন, কমলা রানীর দীঘি, কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা সাত শহীদের মাজার, বিজয়পুর, লেঙ্গুরা, চেংটি, বরুয়াকোনা, গোবিন্দপুর পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যে কোন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষকে আকৃষ্ট করে।

No comments

Powered by Blogger.