কবি আবদুল হাই মাশরেকী ময়মনসিংহের সন্তান
কবি আবদুল হাই মাশরেকী জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৯ সালে ১ এপ্রিল, সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৯১৯ সালে ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জের কাঁকনহাটি গ্রামে তাঁর মামার বাড়িতে। পিতা ছিলেন জমিদার বিরোধী আন্দোলনের তেজোদীপ্ত নায়ক ওসমান গণি সরকার ও মাতা ছিলেন গৃহিনী রহিমা খাতুন। কবি আবদুল হাই মাশরেকী ছোটকাল থেকে গান ও কবিতা রচনা করতেন। কখনো বাড়ির সামনে কাঁচা মাটিয়া নদীর বুকে নিজেই ডিঙ্গি ভাসিয়ে দিয়ে বেড়াতো।
বাংলা সাহিত্যে সনেটে ও কাব্যে গ্রাম বাংলার লোকজ শব্দ প্রথম ব্যবহার করেন তিনি। তার স্ত্রী
সালেহা মাশরেকী। মমতা, আনারকলি, স্বপ্না, পুষ্প (৪ মেয়ে); নোমান, নঈম, শামীম, মামুন ৪ ছেলে)। আনন্দ_মোহন_কলেজ,_ময়মনসিংহ|শিক্ষাজীবনের প্রথমে দিকে তিনি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে কলকাতা চলে যান ।
কবি আবদুল হাই মাশরেকীর বাবা ওসমান গনি সরকার গান-কবিতা লেখালেখি পছন্দ করতেন না। তাই প্রায়শই লেখালেখির কারণে বাবার শাসনে থাকতে হতো আবদুল হাইকে। সে সময় ঈশ্বরগঞ্জ এলাকায় একটা ধারণা ছিল- যারা গান বাজনা ও সাহিত্যচর্চা করে তারা ঘাটু কিংবা যাত্রা দলে যোগ দেয়। ওসমান গনি সরকার কিশোর আবদুল হাই যাতে লেখালেখি না করে এবং পড়াশোনার দিকে মনোনিবেশ হয় সেকারণে কড়া শাসনে রাখতেন। এই শাসনে থেকেও আবদুল হাই রচনা করেন পালাগান, কবিতা ও গল্প। কিশোর হাই তাঁর লেখা গান নিজে সুর দিতেন এবং গ্রামের সুরেলা কণ্ঠের লোক দিয়ে গাওয়াতেন।
মামা আবদুল আজিজ দেখলেন কিশোর আবদুল হাই পিতার শাসনে নিজেকে বাঁধতে চায়নি। তাই তিনি ভাগ্নেকে নিজের কাছে রেখে ঈশ্বরগঞ্জ জাটিয়া হাই স্কুলে ভর্তি করে দেন। তখন জাটিয়া স্কুলের সন্নিকটে দিঘাবিলের পাড়ে বাবলা বন ও আশপাশের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য কিশোর আবদুল হাইকে করে ছিল মুগ্ধ। তাই পড়াশোনা নিয়মিত করলেও তাঁর সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ ছিল বেশি। জাটিয়া হাই স্কুলের সেই দিঘাবিলের পাড়ে বসে লিখে ছিলেন গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ও সময়োত্তীর্ণ পালাগান ‘রাখালবন্ধু’ ও ‘জরিনা সুন্দরী’।
তবে কর্মজীবনে প্রথমে শিক্ষকতা ও পরে জুট রেগুলেশনে কবি আবদুল হাই মাশরেকী চাকরি করেন। এরপর দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ-এ সহ-সম্পাদক, দৈনিক পাকিস্তান (দৈনিক বাংলা), পরবর্তীতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘কৃষিকথা’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৭৬ সালে অবসরে যান।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে আবদুল হাই মাশরেকী সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন ঢাকা, ময়মনসিংহে। ১৯৬৭-৬৮ সালে ‘ওরে আমার ঝিলাম নদীর পানি’ বিখ্যাত গানের শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রাষ্ট্রীয় ‘তঘমাই ইমতিয়াজ’ পুরস্কার ঘোষণা করলে আবদুল হাই মাশরেকী তাৎক্ষণিক তা প্রত্যাখান করেন।
১৯৬৭ সালে তৎকালীন সরকারে নির্দেশে কিছুসংখ্যক সাহিত্যিক রবীন্দ্র বিরোধী স্বাক্ষর আবদুল হাই মাশরেকীর কাছে সংগ্রহ করতে গেলে তিনি স্বাক্ষর না দিয়ে ধিক্কার জানিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন।
কবি আবদুল হাই মাশরেকীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে- আধুনিক কাব্য ‘কিছু রেখে যেতে চাই’, ‘হে আমার দেশ’, ‘ দেশ দেশ নন্দিতা,’ ‘মাঠের কবিতা মাঠের গান’, ‘কাল নিরবধি’, গীতিনাট্য ও কাব্য ‘ভাটিয়ালী’, পুঁথি কাব্য ‘হযরত আবু বকর (রাঃ),’ খন্ড কাব্য ‘অভিশপ্তের বাণী’, পালাগান ‘রাখালবন্ধু’, ‘জরিনা সুন্দরী’, পল্লীগীতিকা ‘ডাল ধরিয়া নুয়াইয়া কন্যা’, জারি ‘দুখু মিয়ার জারি,’ ছোটদের কাব্য ‘হুতুম ভুতুম রাত্রি’, গল্প ‘কুলসুম’ ‘বাউল মনের নকশা,’ ‘মানুষ ও লাশ’, ‘নদী ভাঙে,’ নাটক ‘সাঁকো’, ‘নতুন গাঁয়ের কাহিনী’, অনুবাদ ‘আকাশ কেন নীল’।
এই মহান কবি আবদুল হাই মাশরেকী ১৯৮৮ সালে ৪ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।
ভারত উপমহাদেশীয় লোক সাহিত্যিক সম্রাট কবি,নাট্টকার ‘।
আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে তুই,, এই বিখ্যাত লোক সংগীত এর জনক আবদুল হাই মাশরেকী।
আল্লাহ মেঘ দে পানি দে
ছায়া দেরে তুই আল্লাহ মেঘ দে,
আসমান হইল টুটা টুটা জমিন হইল ফাটা
মেঘ রাজা ঘুমাইয়া রইছে মেঘ দিব তোর কেডা
আল্লাহ মেঘ দে আল্লাহ মেঘ দে
আল্লাহ মেঘ দে পানি দে পানি
ছায়া দেরে তুই আল্লাহ মেঘ দে।।
ফাইটা ফাইটা রইছৈ যত খালা বিলা নদী
পানির লাইগা কাইন্দা ফিরে পঙ্খী জলদি
আল্লাহ মেঘ দে পানি দে পানি
ছায়া দেরে তুই আল্লাহ মেঘ দে।।
কপোত কপোতি কাদে কূপেতে বসিয়া
শুকনা ফুরের কলি পড়ে ঝড়িয়া ঝড়িয়া
আল্লাহ মেঘ দে পানি দে পানি
ছায়া দেরে তুই আল্লাহ মেঘ দে।।
সূত্র উইকিপিডিয়া, ময়মনসিংহ আঞ্চলিক নিউজ।
ছবি গুগল, ফেসবুক, আরো অন্যান্য।
No comments