ময়মনসিংহ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের
ময়মনসিংহ বিভাগের
একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এই জেলার আকার সময় সময় পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৭০
খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহে জেলা থেকে টাঙ্গাইল মহুকুমাকে পৃথক করে একটি জেলা
উন্নীত করা হয়। ১৯৮০-এর দশকে আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন
মহুকুমা
যথা জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনাকে পৃথক পৃথক জেলায় উন্নীত করা হয়।
এছাড়া জামালপুরের অন্তর্গত শেরপুরকেও একটি পৃথক জেলায় উন্নীত করা হয়। এর
আগে ব্রিটিশ আমলে ময়মনসিংহ জেলার কিছু কিছু অংশ সিলেট, ঢাকা, রংপুর ও
পাবনা জেলার অঙ্গীভূত করা হয়েছিল। এই ভাবে ময়মনসিংহ জেলা যা কিনা ব্রিটিশ
আমলে অবিভক্ত ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ জেলা ছিল তার আকার ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে
আসে।
ময়মনসিংহ জেলা
মৈমনসিংহ গীতিকা, মহুয়া, মলুয়া, দেওয়ানা মদীনা,
চন্দ্রাবতী, কবিকঙ্ক,
দীনেশচন্দ্র সেন এবং মুক্তাগাছার
মণ্ডার জন্য বিখ্যাত।
নামকরণ
মোঘল
আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন, তার নামেই মধ্যযুগে অঞ্চলটির নাম হয়
মোমেনশাহী। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন
শাহ তার পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ'র জন্য এ অঞ্চলে একটি নতুন
রাজ্য গঠন করেছিলেন, সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি।
নাসিরাবাদ নাম পরিবর্তন হয়ে ময়মনসিংহ হয় একটি ভুলের কারণে। বিশ টিন
কেরোসিন বুক করা হয়েছিল বর্জনলাল এন্ড কোম্পানীর পক্ষ থেকে নাসিরাবাদ রেল
স্টেশনে। এই মাল চলে যায় রাজপুতনার নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এ নিয়ে অনেক
দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরবর্তীতে আরো কিছু বিভ্রান্তি ঘটায় রেলওয়ে স্টেশনের
নাম পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ রাখা হয়। সেই থেকে নাসিরাবাদের পরিবর্তে
ময়মনসিংহ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে কোনো কোনো ইতিহাসবিদদের মতে মোঘল সেনাপতি
মনমোহন সিংহ ঈসা খা কে দমন করতে যাওয়ার পথে এখানে বেশ কয়েকদিন অবস্থান
করেছিলেন এজন্য এখানকার নাম হয়ে যায় ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ জেলা ১৩টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত; এগুলো হলঃ
- ত্রিশাল,
- ঈশ্বরগঞ্জ,
- গফরগাঁও,
- গৌরীপুর,
- তারাকান্দা,
- ধোবাউড়া,
- নান্দাইল,
- ফুলপুর,
- ফুলবাড়িয়া,
- ভালুকা,
- ময়মনসিংহ সদর
- মুক্তাগাছা
- হালুয়াঘাট
ইতিহাস
ময়মনসিংহ বাংলাদেশের একটি পুরোনো
জেলা।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে রাজস্ব আদায়, প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে স্থানীয় বিদ্রোহ দমনের জন্য এই জেলা গঠন করা হয়। ১৭৮৭ সালের
১ মে
তারিখে এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এখনকার বেগুনবাড়ির কোম্পানিকুঠিতে
জেলার কাজ শুরু হয় তবে পরবর্তী সময়ে সেহড়া মৌজায় ১৭৯১ সালে তা
স্থানান্তরিত হয়।
আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থান একে একে
সিলেট ঢাকা,
রংপুর ও
পাবনা জেলার অংশ হয়ে পড়ে। ১৮৪৫ সালে
জামালপুর, ১৮৬০ সালে
কিশোরগঞ্জ, ১৮৬৯ সালে
টাঙ্গাইল ও ১৮৮২ সালে
নেত্রকোনা মহকুমা গঠন করা হয়। পরে সবকটি মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়।
ময়মনসিংহ শহর হয় ১৮১১ সালে। শহরের জন্য জায়গা দেন
মুক্তাগাছার
জমিদার রঘুনন্দন আচার্য। ১৮৮৪ সালে রাস্তায় প্রথম কেরোসিনের বাতি
জ্বালানো হয়। ১৮৮৬ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ ও ১৮৮৭ সালে জেলা বোর্ড গঠন
করা হয়।
নদীসমূহ
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া বাজার থেকে তোলা সুতিয়া নদীর দৃশ্য
ময়মনসিংহ জেলায় অনেকগুলো নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী,
কাঁচামাটিয়া নদী, মঘা নদী, সোয়াই নদী, বানার নদী, বাইলান নদী, দইনা নদী,
পাগারিয়া নদী,
সুতিয়া নদী,
কাওরাইদ নদী, সুরিয়া নদী,
মগড়া নদী, বাথাইল নদী, নরসুন্দা নদী,
নিতাই নদী,
কংস নদী,
খাড়িয়া নদী, দেয়ার নদী,
ভোগাই নদী,
বান্দসা নদী,
মালিজি নদী,
ধলাই নদী,
কাকুড়িয়া নদী, দেওর নদী, বাজান নদী, নাগেশ্বরী নদী, আখিলা নদী,
মিয়াবুয়া নদী, কাতামদারী নদী, সিরখালি নদী, খিরু নদী, বাজুয়া নদী, লালতি
নদী,
চোরখাই নদী,
বাড়েরা নদী, হিংরাজানি নদী, আয়মন নদী, দেওরা নদী, থাডোকুড়া নদী, মেদুয়ারি নদী, জলগভা নদী, মাহারী নদী।
[৩]
শিক্ষা
এখানে ২টি বিশ্ববিদ্যালয় (
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়),
২টি মেডিক্যাল কলেজ (
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ ), ১টি প্রকৌশল কলেজ (
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ), ১টি ক্যাডেট কলেজ (
ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ),
১টি শারীরিক শিক্ষা কলেজ(ময়মনসিংহ সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজ) আছে
বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনন্দমোহন কলেজ ও প্রিমিয়ার
আইডিয়াল হাই স্কুল), এছাড়াও আরো অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
No comments